স্টাফ রিপোর্টার:
ঢাকা জেলা উত্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) আবদুল্লাহিল কাফী পরিচয় গোপন করে সিটি করপোরেশনের মশার ওষুধ ছিটানোর কর্মী পরিচয়ে পাসপোর্ট নিয়েছিলেন। তাকে একদিনের মধ্যে পাসপোর্ট পেতে সহযোগিতা করায় পাসপোর্ট অধিদপ্তরের উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠলে তিনি দেশ ছেড়ে পালানোর জন্য এই পাসপোর্ট করেন।
সোমবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) এ টি এম আবু আসাদ এসব তথ্য তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, বিষয়টি ধরা পড়ার পর ভুয়া তথ্য দিয়ে নেওয়া সেই পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। এ ঘটনায় গাফিলতির প্রমাণ পাওয়ায় পাসপোর্ট অধিদপ্তরের উপসহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
আবু আসাদ বলেন, আবদুল্লাহিল কাফী পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে নেওয়া তাঁর সরকারি পাসপোর্ট ফেরত দিয়ে পরিচয় গোপন করে সিটি করপোরেশনের কর্মী হিসেবে সাধারণ পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন।
এ জন্য তিনি সিটি করপোরেশনের জাল অনাপত্তি জমা দেন। তিনি বলেন, আগারগাঁওয়ের পাসপোর্ট দপ্তরে ওই পুলিশ কর্মকর্তা সাধারণের বেশে এসে সবার জন্য নির্ধারিত কাউন্টারে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। তিনি পাসপোর্টের জন্য জমা দেওয়া আবেদনপত্রের সঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের স্প্রে ম্যান সুপারভাইজার পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার কাগজ জমা দিয়েছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে আবু আসাদ বলেন, গত ১৫ আগস্ট আবেদন করেন তিনি। সেদিনই তিনি সাধারণ পাসপোর্ট পেয়ে যান। জরুরি ফি জমা দেওয়ায় নিয়মানুযায়ী তিনি ওই দিনই পাসপোর্ট পান। তথ্য গোপন ও জাল কাগজপত্রের বিষয়টি ৪ সেপ্টেম্বর জানার পর পুলিশ কর্মকর্তা কাফীর নতুন পাসপোর্ট বাতিল করার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়।
পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক এ টি এম আবু আসাদ বলেন, ৯ সেপ্টেম্বর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এ বিষয়ে জবাব দেন। ওই দিন জাহাঙ্গীর আলম তাঁর গাফিলতির কথা স্বীকার করেন। পরে সবকিছু যাচাই-বাছাই করে নিশ্চিত হওয়ার পর রোববার তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তদন্তে আরও কারও গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেলে তাঁদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সূত্র জানিয়েছে, গত ১৫ আগস্ট বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস আগারগাঁওয়ে আগের অফিশিয়াল পাসপোর্টের তথ্য গোপন করে (যার নম্বর বিজি ০০১৭১৭২) জমা দিতে আসলে তার জমার সব প্রক্রিয়া শেষ করেন উপসহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম।
কাফী নির্ধারিত ১০১ নম্বর কক্ষে না গিয়ে তিনি সরাসরি উপসহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলমের ১০৩ নম্বর রুমে আবেদনের হার্ড কপি জমা দেন। সেটি তিনি ই-পাসপোর্টের ইন্টারভিউ মডিউলে জমার অনুমোদন দেন। মূলত তাঁর সহযোগিতায় আবদুল্লাহিল কাফী ওই দিন অতি জরুরি পাসপোর্টটি গ্রহণ করেন যার নম্বর (এ ০৮৭৫৭০৪৬)।
বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাফীর পাসপোর্ট বাতিল করার নির্দেশ দেয়। এরপর তাঁর পাসপোর্ট বাতিল করা হয়।সাধারণ পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করলে গত ২ সেপ্টেম্বর বিমানবন্দর থেকে আবদুল্লাহিল কাফীকে আটক করা হয়। এরপর তাঁকে হাজারীবাগে অপহরণ করে নির্যাতনের অভিযোগে করা এক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তবে মামলাটি হয় সরকার পতনের পর। ৩ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মোহাম্মদ আবদুল মোমেনের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে আবদুল্লাহিল কাফীকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত হয়।