মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে উদ্দীপনের উদ্যোগে সুবিধা বঞ্চিতদের মাঝে শীতকালীন প্যাকেজ বিতরণ পিরোজপুরে প্রবীন স্বার্থ সুরক্ষায় সমাজসেবার সাথে রিকের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর তালতলীতে সিপিপির শ্রেষ্ঠ সেচ্ছাসেবক হলেন লিটু আত্রাইয়ে লিগ্যাল এইড কমিটির ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠিত যুবদল নেতা শামীম হত্যা মামলায় সাবেক এমপি পোটন তিন দিনের রিমান্ডে আত্রাইয়ে টিসিবির স্মার্ট পরিবার কার্ড বিতরণ, সাংবাদিকদের সাথে রায়পুরার ওসির মতবিনিময় সভা। নরসিংদীতে ছাত্রদলের কর্মীকে গুলি করে হত্যা করেছে দূর্বৃত্তরা  নরসিংদীতে মাষ্টার সিমেক্স পেপার লিমিটেডের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র: প্রশাসনের হস্তক্ষেপে অপপ্রচার বন্ধ আত্রাইয়ে কুলি ও ভাসমান বেদে সম্প্রদায়ের মাঝে জেলা প্রশাসকের কম্বল বিতরণ

ভোগান্তির এক দিন

খলিলুর রহমান রানা।।

আউটসোর্সিং কর্মীদের আন্দোলন

চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে শনিবার রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে রাস্তা অবরোধ করেন বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের আউটসোর্সিং কর্মীরা। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়, যা দুপুর থেকে ছড়িয়ে পড়ে শহরজুড়ে। ফলে সরকারি ছুটির দিন হলেও রাস্তায় বের হওয়া রাজধানীবাসীকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

প্রায় সাত ঘণ্টার অবরোধে শাহবাগ ও তার আশপাশের রাস্তায় দেখা দেয় তীব্র যানজট। এতে ভোগান্তিতে পড়েন চলাচলকারী মানুষ। এমনকি রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সগুলোকে ঘুরে অন্য রাস্তা দিয়ে যেতে হয়। সায়েন্স ল্যাব থেকে শাহবাগে আসার রাস্তা ও বাংলামোটর থেকে শাহবাগে আসার রাস্তাও যানজটে স্থবির হয়ে যায়।

যানজট সৃষ্টি হয় ফার্মগেট থেকে বাংলামোটরমুখী সড়কেও। এ যানজটের প্রভাব পড়ে রাজধানীজুড়ে। এদিন সকাল ১০টা থেকে ‘আউটসোর্সিং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন’ ব্যানারে শাহবাগ মোড় সড়ক অবরোধ করেন আউটসোর্সিং কর্মীরা। পরে বিকাল পৌনে ৫টার দিকে চাকরি স্থায়ীকরণে জন্য সরকারকে ১৫ দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে সড়ক ছাড়েন তারা। সাত ঘণ্টার এ অবরোধে অবরোধকারীরা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত দফতর, অধিদফতরের সব প্রতিষ্ঠানে আউটসোর্সিং প্রকল্পে কর্মরতদের চাকরি স্থায়ী করার এক দফা দাবি জানান।

বিকাল ৪টার আগে বাংলাদেশ আউটসোর্সিং কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের কর্মচারীদের ছয়জনের একটি প্রতিনিধি দল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার উদ্দেশে যান। তখন কর্মচারী পরিষদের সভাপতি মাহবুবুর রহমান জানান, আলোচনার জন্য যমুনা থেকে তাদের ডাকা হয়েছে। দাবি মেনে নেওয়া হলে তারা সরে যাবেন। আর দাবি না মানা হলে শাহবাগেই অবস্থান করবেন বলে জানান তিনি।

প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা থেকে বেরিয়ে প্রতিনিধি দলের সদস্য আন্দোলনের সমন্বয়ক আবদুর রাকিব সনেট বলেন, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের সঙ্গে আমাদের প্রতিনিধি দলের কথা হয়েছে।

তিনি জানিয়েছেন, যত দ্রুত সম্ভব আমাদের দাবি আদায়ে কাজ করবেন। সংস্কার কমিটির মাধ্যমে বা বিশেষ কমিটি গঠনের মাধ্যমে দাবি আদায় করা হবে। ভবিষ্যতে আউটসোর্সিং কর্মচারীদের সঙ্গে বৈষম্য করা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান তিনি। এ ছাড়া ১৫ দিনের মধ্যে তাদের দাবি পূরণ করা না হলে আরও বড় কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও জানান সনেট। পরে বিকাল ৫টার দিকে সড়ক ছেড়ে দেন আন্দোলনকারীরা।

আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের রাজস্ব খাতে নিলে সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় হবে না। প্রতি মাসে যে পরিমাণ টাকা ঠিকাদারকে দেওয়া হচ্ছে, তা বন্ধ হলেই সরকারের সঞ্চয় হবে, যার আসল ও লভ্যাংশ থেকে অতিরিক্ত যাবতীয় ব্যয় বহন করা সম্ভব।

আউটসোর্সিং কর্মচারী রাহেল রায়হান বলেন, আমাদের দৈনিক হাজিরাভিত্তিক বেতন দেওয়া হয়। চাকরিটা অস্থায়ী হওয়ায় অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকতে হয়। কোনো কিছু হলেই চাকরিচ্যুত করা হয়। আমরা চাকরির নিশ্চয়তা চাই, চাকরি স্থায়ী চাই।

সরেজমিন দেখা যায়, সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত কয়েকশ অবরোধকারী শাহবাগে অবস্থান করেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও সেখানে ছিলেন। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে পুলিশ আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দিতে চাইলে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তখন পুলিশ পেছনে সরে যায়। দুপুরে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী শাহবাগ মোড়ে আসেন।

তিনি অবরোধকারীদের প্রতি সংহতি জানান। তাদের দাবি মেনে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। অবরোধ চলাকালে শাহবাগ ও এর আশপাশের রাস্তায় প্রচণ্ড যানজটের সৃষ্টি হয়। অ্যাম্বুলেন্সগুলো ঘুরে অন্য রাস্তা দিয়ে যায়। সায়েন্স ল্যাব থেকে শাহবাগ এবং বাংলামোটর থেকে শাহবাগে আসার রাস্তা যানজটে স্থবির হয়ে যায়।

ব্যক্তিগত প্রয়োজনে শাহবাগের আশপাশে সারা দিন কয়েকবার যেতে হয় আছমা আক্তারকে। যানজটের ভোগান্তি নিয়ে তিনি মেঘনা টেলিভিশনকে বলেন, ‘শাহবাগের আশপাশে সারা দিন কাজ ছিল। যানজট থাকায় হেঁটে হেঁটে কাজ করতে হয়েছে। বাংলামোটর এলাকায় যানজটে হাঁটতে থাকা মো. হৃদয় নামে একজন বলেন, ‘উত্তরা থেকে এক্সপ্রেস হাইওয়ে হয়ে বিজয় সরণি এসেছি ৩০ মিনিটে।সেখান থেকে দীর্ঘ সময় বাসে বসে থেকে হেঁটে বাংলামোটর এলাম। এখন হেঁটেই যেতে হবে শাহবাগ।

মো. সাইফুল তীব্র যানজটে তার ভোগান্তির কথা জানিয়ে বলেন, ‘মিরপুর-১ থেকে শাহবাগগামী বাসগুলো অর্ধেক রাস্তায় গিয়ে কলেজগেট থেকে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। কলেজগেট থেকে অন্য বাস যেন আর চলেই না। কলেজগেট থেকে ফার্মগেট পৌঁছতে সময় লেগেছে এক ঘণ্টার বেশি। সেখান থেকে হেঁটে বাংলামোটর অফিসে এসেছি।

অবরোধ চলাকালে আউটসোর্সিং খাতে নিয়োজিত কর্মচারীরা বেশ কয়েকটি অভিযোগ তুলে ধরেছেন। তাদের অভিযোগ, টেন্ডার জটিলতায় কর্মরত অনেকের চাকরি চলে যায়, বছর শেষে জুন মাসে নবায়ন করার নামে বিপুল অঙ্কের ঘুষ দাবি করা হয়, ঘুষ না দিলে চাকরি চলে যায়। এ ছাড়া প্রতি মাসে বেতন না পাওয়া, কখনো কখনো পাঁচ থেকে ছয় মাস, আবার এক থেকে দুই বছরও বেতন বকেয়া থাকে বলে অভিযোগ করেছেন অবরোধকারীরা।

শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আসাদুজ্জামান মেঘনা টেলিভিশনকে বলেন, ‘চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের আউটসোর্সিং কর্মীরা সকাল ১০টা থেকে শাহবাগ মোড়ে রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করেন। বিকাল ৫টার দিকে তারা শাহবাগ ত্যাগ করেন। সারা দিন এ এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকলেও এখন যান চলাচল স্বাভাবিক।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক বিভাগ) খন্দকার নজমুল হাসান বলেন, ‘যানজট নিরসনে সকাল থেকে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা কাজ করেন। শাহবাগ মোড়ে অবরোধ করায় কয়েকটি রাস্তা ডাইভার করে অন্য রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলাচল সচল রাখার চেষ্টা করা হয়।

তিনি বলেন, ‘যে কারও দাবি-দাওয়া থাকতে পারে। সে জন্য রাস্তা অবরোধ করতে হবে কেন? গুটিকয়েক মানুষের জন্য লাখ লাখ মানুষের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। শিশু-বৃদ্ধ থেকে শুরু করে অসুস্থ মানুষের ভোগান্তি কথাও সবার ভাবতে হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


https://www.facebook.com/profile.php?id=100089135320224&mibextid=ZbWKwL