নিষেধাজ্ঞা শেষে বাজারে ইলিশ ফিরলেও দাম এখনো আকাশচুম্বী
ভোগ্যপণ্যের বাজারে কোনো সুখবর নেই।
কোনো পণ্যের দামই কমছে না, উল্টো পেঁয়াজ,আলু, মাছ, চাল-ডালসহ অধিকাংশ পণ্যের দামই দফায় দফায় বাড়ছে। দেশে এখন সবজির ভরা মৌসুম চলছে-এ কারণে দাম হয়তো কিছুটা কমেছে, কিন্তু সবজি এখনো ক্রেতার নাগালে আসেনি। পেঁয়াজের কেজি ঠেকেছে ১৭০ টাকায়। আলুর দামও বেড়েই চলেছে। নিষধাজ্ঞা শেষে বাজারে প্রচুর ইলিশের সমাগম হলেও দাম সেই আকাশচুম্বীই। এছাড়া চাল-ডালের দামও ফের বেড়েছে। বাজারে সবকিছুর দাম অত্যাধিক চড়া থাকায় সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। সংসার চালাতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
সবজির বাজারে একমাত্র কম দামি সবজি পেঁপে। কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। বাকি সব সবজি ৬০ থেকে ৮০ টাকায় আটকে আছে। তবে বাজারে সেঞ্চুরি হাঁকানোর তালিকায় রয়েছে গোল বেগুন, করলা, শিম, বরবটি ও কাঁকরোল। এগুলোর প্রতি কেজি ১০০ টাকা হলেও টমেটো, গাজর যথাক্রমে ১৬০ ও ১৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে গোল বেগুন প্রতি কেজি বিক্রি হয় ১০০ টাকা, লম্বা বেগুন ৮০ টাকা, ঝিঙা ৬০ টাকা, ধুন্দুল ৬০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, করোলা ১০০ টাকা, শসা ৮০ টাকা, শিম ১০০ টাকা, কচুর মুখি কেজি ৮০, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৬০ টাকা, টমেটো ১৬০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, গাজর ১৮০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, ছোট সাইজের ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতি পিস ৫০ টাকা, কাঁকরোল প্রতি কেজি ১০০ টাকা এবং কাঁচামরিচ ২০০ টাকায় বিক্রি হয়।
নরসিংদীর বাজারের ক্রেতা আব্দুল হালিম বলেন, রাজধানীতে শীত আসছে আসছে ভাব। এই সময় সবজির দাম থাকবে সবচেয়ে কম। অথচ বাজারে বেশিরভাগ সবজির দাম ১০০ টাকা বা তার ওপরে। কিছু সবজি ৬০ থেকে ৮০ টাকার ঘরে। কিছুদিন আগেও এর সবগুলোর দাম আরও বেশি ছিল। অথচ এই সময়ে এসে সবজির দাম অনেক কম থাকার কথা। এত দাম দিয়ে যদি সবজি কিনতে হয়, তাহলে অন্য পণ্য কিনবো কীভাবে?
আরেক ক্রেতা বলেন, বিক্রেতারা বলছে আগের চেয়ে সবজির দাম কমেছে। হ্যাঁ কমেছে সেটা ১৪০-১৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকায় নেমেছে। কিছু সবজি ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু এটাকে তো সবজির দাম কমেছে বলা যায় না। বরং সবজির দামের ঊর্ধ্বগতি। সাধারণ ক্রেতাদের বাজারদর নিয়ে এমন আপত্তি, ভোগান্তি তবুও বাজার মনিটরিংয়ের কোনো উদ্যোগ কখনোই দেখলাম না।
নরসিংদীর বাজার থেকে পাইকারি সবজি কিনে এনে খুচরা বাজারে বিক্রি করেন কবীর হোসেন।
সবজির দাম বিষয় তিনি বলেন, এই সময় বেশিরভাগ সবজির মৌসুম শেষ হয়ে যায়, নতুন করে সবজি ওঠার অপেক্ষায় আছেন কৃষকরা।
সেই কারণে সবজির দাম একটু বেশি যাচ্ছে। আবার একেবারে নতুন কিছু সবজি উঠেছে বাজারে সেগুলোর দামও কিছুটা বেশি। তবে শীত চলে আসলে, নতুন সব সবজি বাজারে উঠবে তখন সবজির দাম অনেক কমে যাবে। এখন বাজারে সবজির সরবরাহ তুলনামূলক কম, সে কারণেই বাজার কিছুটা বাড়তি যাচ্ছে।
এদিকে বাজারে আলুর দাম গত সপ্তাহের চেয়ে ৫ টাকা এবং দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়েছে। যা এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০ কেজি টাকা দরে। আলুর এ দাম চলতি বছরের সর্বোচ্চ। খুচরা বাজারের বিক্রেতারা জানিয়েছেন, গত শুক্রবার নরসিংদীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি আলু ৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তার আগের সপ্তাহে আরও পাঁচ টাকা কম ছিল।
অর্থাৎ দুই সপ্তাহ আগে আলুর দাম ছিল ৬০ টাকার মধ্যে। পাইকারি বিক্রেতারা জানান, এখন পাইকারিতেই প্রতি কেজি আলু ৬২-৬৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা এক সপ্তাহ আগে ৫৮-৬০ টাকা ছিল।
আলুর দামের বিষয়ে নরসিংদীর বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, আলুর মৌসুম এখন শেষের দিকে। প্রতি বছর এ সময় দাম বাড়ে। তবে এ বছর শুরু থেকে আলু চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। এরপর এখন বেড়ে আরও অস্থিতিশীল হয়েছে।
অপরদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে মাছের বাজারে গত একমাসের তুলনায় কিছুটা দাম কমলেও ইলিশের দাম এখনো অনেক চড়া। বাজারে প্রতি কেজি পাঙাশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা পর্যন্ত, যা গত সপ্তাহেও বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকা পর্যন্ত কেজি।
এছাড়াও বাজারে শিং মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, যা পূর্বে ছিল ৪৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। এদিকে মাছের মধ্যে কই-তেলাপিয়ার দামেও কিছুটা স্বস্তি মিলছে বলে জানিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আজকের বাজারে প্রতি কেজি তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৩০ টাকা এবং কই মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। বাজারে প্রতি কেজি পাবদা ৩৫০ টাকা, রুই ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, কাঁতল ৩২০ থেকে ৩৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া চিংড়ি প্রতি কেজি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, বোয়াল প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, সরপুঁটি প্রতি কেজি ৩০০ টাকা, রুপচাঁদা ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা, গলসা ৬০০ টাকা, ট্যাংরা প্রতি কেজি ৬০০ টাকা, চাপিলা মাছ ৬০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
বেসরকারি চাকরিজীবী মুর্শেদ আলম মাছ-মাংসের দাম প্রসঙ্গে বলেন, দেশি মুরগি, গরু, খাসির মাংস তো অতিরিক্ত দামের কারণে খেতে পারি না। খাওয়ার মধ্যে কোনোভাবে কিনি ব্রয়লার আবার কোনো কোনো সময় সোনালি মুরগি। এগুলো দাম যদি একটু কম থাকে, তাহলে মাসটা কিছুটা স্বস্তিতে যায়। কিন্তু দামটা বেড়ে গেলেই আবার সমস্যায় পড়তে হয়। বর্তমান বাজারেও যে অবস্থা, তাতে করে ব্রয়লার মুরগিও কেনা এখন দায় হয়ে গেছে।
তিনি আরো বলেন, আমি মনে করি ব্রয়লার মুরগির দাম সর্বোচ্চ ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা পর্যন্ত হলেই যথেষ্ট কিন্তু এই মুরগি আজকে কিনেছি ১৮০ টাকায়, যা হুটহাট করেই আবার ২০০-২১০ টাকা কেজি হয়ে যায়।
কিন্তু সরকার গতমাসে ব্রয়লার মুরগির দাম নির্ধারণ করে দিলো, কিন্তু এরপর থেকে একটি দিনের জন্যও ব্রয়লার নির্ধারিত দামে বিক্রি হয়নি। সংশ্লিষ্টদের যদি বাজারে মনিটরিং না থাকে তাহলে শুধু দাম নির্ধারণের ঘোষণা দিয়ে কি লাভ?
মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে ইলিশের দাম। সরবরাহ কম থাকায় দামও অনেক বেশি, আকার ভেদে প্রতি কেজি ইলিশের দাম বেড়েছে বেড়েছে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পাঁচ দিন পরেও দাম বেশি থাকায় ক্ষুব্ধ ক্রেতারা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাগরের মাছ না আসা এবং নদ-নদীতে কাঙ্ক্ষিত মাছ না পাওয়ায় দাম বেশি।
শুক্রবার বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক কেজি ওজনের ইলিশ ১৬শ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে, ৭-৮শ গ্রামের ইলিশ ১২শ টাকা, ৫শ গ্রাম ওজনের মাছ ১ হাজার, ৩-৪টিতে কেজির মাছ ৭-৮শ টাকা এবং ৫-৬টিতে কেজির মাছ বিক্রি হচ্ছে ৫শ থেকে ৬শ টাকা করে।
এদিকে গতকালের বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করতে দেখা গেছে প্রতি কেজি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায়। সোনালি মুরগি ৩২০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩৩০ টাকা, কক মুরগি ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দেশি মুরগি আগের মতো বাড়তি দামে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকায় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা আর খাসির মাংস ১১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতারা বলেন, একটা সময় প্রতি সপ্তাহেই অন্তত একদিন মাংস খাওয়া হতো। কিন্তু এখন সেটা কঠিন হয়ে গেছে। এখন শুধু বাসায় কোনো মেহমান আসলেই মাংসটা খাওয়া হয়। কিন্তু দিনদিন যেভাবে দাম বাড়ছে, এখন আমাদের মাংস কেন অসম্ভব হয়ে যাবে।
গরু-খাসির মাংসের দাম প্রসঙ্গে মাংস বিক্রেতা হাবিবুর রহমান বলেন, গরু-খাসির মাংসের দাম দীর্ঘদিন এক জায়গাতেই আছে। আজকের বাজারে গরু বিক্রি করছি ৭৫০ টাকায়, খাসি ১১০০ টাকায়। আমরা যদি তুলনামূলক কম দামে গরু-খাসি কিনতে পারি তাহলে ক্রেতা পর্যায়ে দাম আরও কমিয়ে রাখতে পারব।
আমি মনে করি সরকার এদিকে যথাযথ নজর দেওয়া দরকার