মেঘনা টিভি নিউজ ডেস্ক: ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসায় শৃঙ্খলা, সমতা ও বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে ৯টি বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ-আটাব।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ও সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন আটাবের সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব আফসিয়া জান্নাত সালেহ, সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান হিরো, মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান খান নেওয়াজ, যুগ্ম মহাসচিব আতিকুর রহমান প্রমুখ।
আটাবের সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ বলেন, উল্লেখিত বিষয় সম্পর্কে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি এবং পরামর্শ প্রদান করেছি। আমাদের বক্তব্য মন্ত্রণালয় আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করেছেন। এগুলো বাস্তবায়ন করা না গেলে এই সেক্টরের শৃঙ্খলা থাকবে না। নিবন্ধনহীন এক শ্রেণির ব্যবসায়ী টিকিট দেওয়ার নামে জনগণের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে এয়ার টিকিটের মূল্য কেন বেশি এটি আমরা বারবার বলেছি। গ্রুপের নামে টিকিট ব্লক করে দেওয়া হচ্ছে। অথচ এটি কোনো গ্রুপ না। মূলত টিকিটের দাম বাড়াতেই কৌশলে এগুলো করা হচ্ছে।
তা ছাড়া তিনি বলেন, আমাদের কাজ হলো সরকারকে অনিয়ম-অন্যায় দেখিয়ে দেওয়া। কাজ করবেন তারা। আমরা আশা করছি এবারের এই ৯ বিষয়ের ওপর সরকার গুরুত্ব দেবে এবং এ সেক্টরের যে সমস্যাগুলো আমরা চিহ্নিত করেছি তা দূর করতে উদ্যোগী হবেন।
এতে বলা হয়, অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর আইডি ব্যবহার করে সারা দেশে ২০ থেকে ২৫ হাজার অবৈধ ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা পরিচালনা করছে। ওটিএগুলো তাদের লগিন আইডি অবৈধ ট্রাভেল এজেন্সিদের দেওয়ার পাশাপাশি বৈধ ট্রাভেল এজেন্সির স্টাফদের দিয়ে রেখেছে, যার ফলে এজেন্সিতে কর্মরতদের অনেকে তাদের টিকেট বিক্রি না করে ওটিএদের টিকিট বিক্রি করছে। এতে তাদের ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে।
এই সমস্যা সমাধানে অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি (ওটিএ) ব্যবসা পরিচালনার যথাযথ নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানান।
আটাব সভাপতি বলেন, ‘ট্রাভেল এজেন্সিরা এয়ারলাইনস থেকে টিকিট বিক্রির মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৭% কমিশন পেয়ে থাকে। ট্রাভেল এজেন্সিরা তাদের কমিশনের উপর নিজস্ব মুনাফা রেখে গ্রহকদের জন্য বিভিন্ন শতাংশে ছাড় দিয়ে থাকে। এই ছাড় কোনভাবেই ৭% এর উপরে হতে পারে না।
অথচ অনলইন ট্রাভেল এজেন্সি প্রিডেটরি প্রাইসিং এর মাধ্যমে প্রকাশ্যে কিছু কিছু অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি গ্রাহকদের আকর্ষণ করার জন্য তাদের পোর্টালে ১৪ থেকে ২০ শতাংশ এর উপরে ছাড়ের ঘোষণা দিচ্ছে।
এই ছাড়ের ঘোষণা দিয়ে টিকিট বিক্রি করলেও ক্রেতারা বাস্তবে সেই ছাড় পাচ্ছে না এবং প্রতারিত হচ্ছে। সম্প্রতি দুটি প্রতিষ্ঠান দেশ থেকে প্রচুর অর্থ পাচার করেছে।
বিষয়গুলো হলো- অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি (ওটিএ) ব্যবসা পরিচালনার যথাযথ নীতিমালা প্রণয়ন করা জরুরি। এয়ার টিকিটের মজুতদারি ও সিন্ডিকেট বন্ধ করে গ্রুপ টিকিটিংয়ের নীতিমালা/নির্দেশ প্রদান করা। টিকিটের গায়ে এজেন্সির নাম, যোগাযোগের ফোন নম্বর, টিকিটের মূল্য উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক করা।
বিদেশি ওয়েবসাইট/এপিআইগুলো যাতে বাংলাদেশে অবৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে না পারে সেজন্য বিদেশি ব্লক করা ও অর্থ পাচার বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি। তৃতীয় দেশ (যাত্রা ও গন্তব্যের দেশ ব্যতীত অন্য কোনো দেশ। যেমন- ভারত, দুবাই, সিঙ্গাপুর) থেকে বিক্রয়কৃত টিকিটের যাত্রী বাংলাদেশ বিমানবন্দরে অনবোর্ড বন্ধ করলে তৃতীয় দেশ থেকে টিকিট বিক্রয় ও অর্থ পাচার বন্ধ হবে।
এয়ার টিকিট বিক্রয়ের নামে শত শত কোটি টাকা অগ্রিম অর্থ সংগ্রহের বিপরীতে ইনসেনটিভ প্রদান বন্ধ করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া। এই সেক্টরে অরাজকতা ও জনস্বার্থহানি প্রতিরোধ করতে ও ট্রেডে বৈষম্য কমাতে ট্রাভেল এজেন্সি এয়ারলাইন্সের মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে টিকিটের ভাড়া প্রদর্শন, বিজ্ঞাপন, বিক্রয় ও বিপণন করতে না পারে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্দেশনা প্রদান।
নিবন্ধনবিহীন ভুয়া এজেন্সিদের অবৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা, এয়ার টিকিট ও সেবা বিক্রয় বন্ধ করার ব্যবস্থা।
লাইসেন্সবিহীন কোনো ভুয়া এজেন্ট প্রতিষ্ঠানকে ব্যবসা করার জন্য অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি (ওটিএ) যাতে লগইন আইডি প্রদান না করে সে মর্মে নির্দেশনা প্রদান।