নিজস্ব সংবাদদাতা:
কে হচ্ছেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি ঘুরেফিরে আসছে ইউনূসের নাম।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দালিলিক প্রমাণ নিয়ে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের স্ববিরোধী বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তার পদে থাকার বিষয়টি এখন প্রশ্নের সম্মুখীন।
রাষ্ট্রপতির বক্তব্যে ক্ষুব্ধ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সমাবেশ করে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের আল্টিমেটাম দিয়েছেন প্ল্যাটফর্মের নেতারা। এর আগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে মিথ্যাচার করছেন রাষ্ট্রপতি।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বর্তমান রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনকে সরানোর বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চিন্তাভাবনা চলছে সরকারে। শেষ পর্যন্ত তাকে সরানো হলে কে হবেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি? এ ক্ষেত্রে ঘুরেফিরে আসছে বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রেও এমন আভাস পাওয়া গেছে।
এ কথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন। পালিয়ে যাওয়ার আগে তিনি পদত্যাগ করেছিলেন কি না এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, পদত্যাগ নিয়ে তার কাছে কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। অথচ তিনি নিজেই তিন বাহিনীর প্রধানদের পাশে নিয়ে বলেছেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। তিনি পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন। এ কারণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলতে বাধ্য হয়েছেন যে, পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতি মিথ্যাচার করছেন।
এখন স্বাভাবিকভাবে সামনে এসে যায় তা হলে কীসের ভিত্তিতে তিনি এ দুই ধরনের কথা বললেন। এখন এ প্রশ্ন এখন সাধারণ মানুষের মধ্যে। শুধু তাই নয়, তিনি রাষ্ট্রপতির পদ এখনও অলংকরণ করতে পারেন কি না, তা নিয়ে সারা দেশের মানুষের মনে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয়েছে।
এ ক্ষোভের প্রকাশ ঘটেছে গতকাল শহিদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আয়োজিত গণজমায়েত। যেখানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সব শ্রেণির মানুষ সমবেত হয়েছে। একই সঙ্গে বঙ্গভবনের কাছাকাছি বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। যে সমাবেশে সব শ্রেণির জনতার উপস্থিতি দৃশ্যমান।
দুধরনের বক্তব্য দেওয়ায় রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগ করার জন্য ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে সমাবেশ থেকে।
আল্টিমেটাম দেওয়ার পর প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে উপপ্রেস সচিব জানিয়েছেন, উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের বক্তব্যের সঙ্গে সরকার একমত। তবে রাষ্ট্রপতির অপসারণের ব্যাপারে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রাথমিকভাবে রাষ্ট্রপতির ব্যাপারে একটি চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
বিষয়টি আরও গভীরভাবে পর্যালোচনা করার জন্য আজ (মঙ্গলবার) না হয় আগামীকাল (আজ) উপদেষ্টা পরিষদে আলোচনা হবে। আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
নাম না প্রকাশ শর্তে প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমান রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগ করার বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। আইনগত বিষয়টি আরও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনকে অপসারণ করা হলে কে হবেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি। মূলত এই বিষয়টি এখন সরকারের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে।
ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নামটি ঘুরেফিরে আসছে। কেন আসছে- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, এখন অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে অনেক কিছু সংস্কারের বিষয় অগ্রাধিকার পাচ্ছে। সেই অগ্রাধিকারের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সংবিধান সংস্কার। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনকে দিয়ে সংবিধান সংস্কারের কাজ বেশি দূর নাও এগোতে পারে। আবার যদি নতুন করে সংবিধান লেখা হয়- এ ব্যাপারে তার সহযোগিতা পাওয়া কঠিন হতে পারে। সে বিবেচনায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস যদি রাষ্ট্রপতি হন তা হলে সংবিধান সংস্কারের কাজ খুব দ্রুত হবে।
জানা গেছে, রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের ব্যাপারে আজকালের মধ্যে কয়েকজন আইনজ্ঞের সঙ্গে বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ইতিমধ্যে তার মতামত জানিয়ে দিয়েছেন। তবে কী মতামত দিয়েছেন তা জানা সম্ভব হয়নি।
বর্তমানে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান দেশের বাইরে রয়েছেন। আগামী ২৫ অক্টোবর তিনি দেশে ফিরবেন। রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের অপসারণের বিষয়টি সেনাপ্রধান আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে কি না, সে বিষয়ে কেউ কিছু বলতে পারছেন না। তবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দেখতে চান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ দেশের আপামর জনতা